শাহজাদপুরে শত শত হতদরিদ্র কৃষকেরা স্বাবলম্বী মুখে আনন্দের হাসি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর পূর্বপাড় সোনাতুনি ইউনিয়নের ধীতপুর চরে এ বছর ব্যাপক হারে পটল চাষ হয়েছে। ধূ ধূ বালুর চরে পটলের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। অপর দিকে পটল চাষ করে এ চরের শত শত হতদরিদ্র কষক ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এক সময় যারা দু‘বেলা পেট ভরে খেতে পারতো না। থাকতো গমের কাটার তৈরী ঝুঁপড়ি ঘরে। পটল চাষ করে এখন তারা বাড়িতে দোচালা ও চৌচালা বড় বড় টিনের ঘর দিয়েছে। অভাব দূর হয়েছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করছে। কথা হয় ধীতপুর গ্রামের আলমাস আলী মন্ডল (৪৫), তার স্ত্রী লিপি খাতুন (৩৫) ও বড় ছেলে চয়ন ইসলামের সাথে। তারা জানায়, রাক্ষুসী যমুনার তান্ডবে ১০ থেকে ১২ বার তাদের বাড়িঘর ভেঙ্গেছে। প্রতিবারই তারা এক চর ছেড়ে অন্য চরে গিয়ে বসতি গড়েছেন। এতে তারা সর্বস্ব হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এ বছর ১২ হাজার টাকা বছর চুক্তিতে অন্যের দেড় বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে পটল চাষ করেছেন। তাদের এ দেড় বিঘা জমিতে পটলের আবাদ খুবই ভাল হয়েছে। পটল গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে পটল ধরেছে। থোঁকা থোঁকা পটলে ছেয়ে গেছে পুরো জমি। গত ১ মাস ধরে তাদের এ জমি থেকে পটল উঠতেও শুরু করেছে। এরই মধ্যে তারা প্রায় ১ লাখ টাকার পটল বাজারে বিক্রি করেছে। আগামী আরো ২ মাস এ জমি থেকে তারা পটল তুলে বাজারে বিক্রি করবে। এতে আরো এক থেকে দেড় লাখ টাকার পটল তারা বিক্রি করতে পারবে। এ ছাড়া তারা এ জমির পাশে মিষ্টি লাউ চাষ করেছে। ইতিমধ্যেই তারা প্রায় ২০ হাজার টাকার মিষ্টি লাউ বিক্রি করেছে। আগামী দু‘মাসে তারা আরো ২০ হাজার টাকার মিষ্টি লাউ বিক্রি করবে। এ আয় দিয়ে তারা ইতিমধ্যেই বাড়িতে বড় করে দু‘টি টিনের ঘর দিয়েছে। এ ছাড়া তারা বাড়িতে দু‘টি সাঁড় গরু মোটাতাজা করছে। আগামী সবেবরাতের মধ্যে এ দু‘টি সাঁড় গরু কমপক্ষে ২ লাখ টাকা বিক্রি করবে। তারা জানায়,৭ মাস আগে ১ লাখ টাকায় এ সাঁড় দু‘টি কিনেছিল। চরের তাজা কাটা ঘাস ও খইল-ভূষি পরিমাণমত খাওয়ানোর ফলে তা এখন দ্বিগুণ বড় হয়েছে। বাজারে এর দামও দ্বিগুণ হবে। এ গরু লালন পালন করে যে আয় হবে তা দিয়ে তারা বাড়িতে আরো একটি ঘর দিবে। এ ছাড়া আগামী বছর এ পটল চাষের পাশাপাশি তারা পতিত জমিতে ভূট্টা ও অন্যান্য সব্জি চাষ করবে। চয়ন ইসলাম বলে, তারা ৩ ভাই তাদের কোন বোন নেই। সে সবার বড়। ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। পাশাপাশি বাবা মায়ের সাথে পটল চাষের কাজে সহযোগীতা করে। মেঝ ভাই রিফাত(১০) নানার বাড়ি থেকে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ছোট ভাই আরাফাতের বয়স মাত্র ২ মাস। সে এখনও মায়ের কোলে। চয়নের মা লিপি খাতুন জানায়, এ বছরই তারা প্রথম পটল চাষ করছে। প্রথম বছরেই ফলন ভাল হয়েছে। প্রতি মণ পটল তারা পাইকারি ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। লাভ ভাল পাওয়ায় তারা আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পটল চাষ করার চিন্তাভাবনা করছে। পটল চাষ করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তিনি আরো জানান,শুধু তারাই নয় এ গ্রামের কম পক্ষ ২৫ জন কৃষক ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে এ বছর পটল চাষ করে তাদের মত স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এরা হলেন, জহুরুর উদ্দিন, ইউসুফ, রফিকুল, রশিদুল, হাসেম, গফুর, সেরাজুল, সাইফুল, হারুন, আক্কেল, রাজু, রাজ্জাক, সাবান, নিজাম, মোস্তফা, দেলবার, সোমেশ, সোবাহান, কুরমান, জহুরুদ্দিন, আক্কাস, এনতাজ, আজমত, সবুজ মিয়া, আব্দুল মতিন, হেকমত। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মনজু আলম সরকার বলেন,এ বছর শাহজাদপুর উপজেলার, যমুনা নদীর কৈজুরি, সোনাতুনি, গালা ও জালালপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের ৩৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা পটল চাষ করেছে। এর মধ্যে বানতিয়ার,ছোট চানতারা,বড় চানতারা, মাকড়া, শ্রীপুর, জগতলা গ্রামে পটলের বাম্পার ফলন হয়েছে।তিনি আরো বলেন, পটল চাষ করে শাহজাদপুরের যমুনা নদীর চর এলাকার হতদরিদ্র কৃষকেরা বেশ স্বচ্ছল হয়ে উঠছে। ফলে আগামী বছর পটলের আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন,পটল বেলে দোআশ মাটিতে ভাল জন্মে। এ ছাড়া পটল চাষে খরচও খুব কম। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ করা যায় বলে আমরা চরের হতদরিদ্র কৃষকদের পটল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এতে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে।