চার বছর আগে সহিংসতার মধ্য দিয়ে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, সেটা আর চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক। আর এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত থাকার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার গাজীপুরের সফিপুরে আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাহিনীটির ৩৮তম জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় এই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আপনাদের প্রতিটি সদস্যকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। ভোটের অধিকার জনগণের মৌলিক অধিকার। সেটা যেন তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে।’
‘আমরা চাই আমাদের আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন আরও সমৃদ্ধশালী হোক, জনগণ তার সাংবিধানিক অধিকার যেন প্রয়োগ করতে পারে, সে বিষয়ে যথাযথভাবে আপনাদেরকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন ঠেকাতে সহিংস আন্দোলনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক, সেটির অবসান হয়নি এখনও। সরকার আর সংসদের বাইরে থাকা বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপির অবস্থান দুই মেরুতে। এই অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচনেও চার বছর আগের পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সে নিয়ে সংশয় আছে দেশে।
চার বছর আগের সেই নির্বাচনের পরিস্থিতিও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেই পরিস্থিতিতে আনসার ভিডিপির ভূমিকার প্রশংসাও করেন তিনি।
‘যখন বিএনপি-জামায়াত জোট আগুন দিয়ে রেল লাইন পোড়াচ্ছিল, রাস্তায় আগুন দিয়ে যাত্রীবাহী বাস পুড়িয়ে দিয়ে মানুষকে হত্যা করেছিল তখন আপনারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন।’
‘আপনারা শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। কাজেই যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। সেই সঙ্গে সঙ্গে আপনারা চেইন অব কমান্ড মেনে দায়িত্ব পালনে সব সময় সচেষ্ট থাকবেন, এটাই আমরা চাই।’
সকালে প্রধানমন্ত্রী একাডেমিতে পৌঁছে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যদেকে ব্যাপ পরিয়ে দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার স্মরণ করেন। এই বাহিনীর ৬৭০ জন সদস্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠন করা স্বাধীন বাংলা সরকারকে প্রথম সালামও দিয়েছিল আনসার বাহিনী। এই বাহিনীর ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম অস্ত্র ছিল বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় ১৩ মিনিটের বক্তব্যে আনসার বাহিনীর কল্যাণে সরকারের নানা উদ্যোগ, সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, দেশের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাহিনীর পতাকা ছিল না। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি, প্রথম পতাকা আমি দিয়েছিলাম, জাতীয় পতাকা আপনারা প্রথম পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।’
‘আপনাদের যত সুযোগ সুবিধা ও কল্যাণের বিষয় দাবি করতে হয়নি। আমি নিজের থেকেই এই দেশকে চিনি, জানি, আমি জাতির পিতার কন্যা। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেন উন্নত হয়, তার জন্য আমরা কাজ করেছি এবং করে যাচ্ছি।’
সেবা এবং সাহসিকতা সেবার প্রবর্তন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের সর্বনিম্ন এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকি ভাতা প্রবর্তনের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরমাণু যুগে পদার্পণ করছি। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমরা স্থাপন করছি। আগামী মার্চ মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।’
‘পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছি। কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছি।’
‘আমাদের বাজেট ৬১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে চার লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করে ব্যাপকভাবে উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যে উন্নয়ন হচ্ছে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত।’
বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, একটি মানুষও ক্ষুধায় কাতর থাকবে না, প্রতিটি ছেলে মেয়ে স্কুলে যাবে, লেখাপড়া শিখবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় উন্নতির পরিপন্থী অপশক্তি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, জ্বালাও পোড়াও, অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করে এবং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের কোনো স্থান হবে না।’
ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখছে কি না, স্কুল কলেজে থাকছে কি না, লেখাপড়ায় ফাঁকি দিচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সবাইকে সুদৃষ্টি রাখারও তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা কোনোভাবেই যেন সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হতে না পারে সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাব।’