1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:
ট্রাম্পের হুমকির কাছে মাথা নত করবো না: মাসুদ পেজেশকিয়ান দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’ ঘোষণা সাময়িক বন্ধের পর পুনরায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে নভোএয়ার ২শ কেজি গাঁজাসহ দুই নারী আটক সাড়ে ছয় ঘণ্টা অবস্থানের পর শাহবাগ মোড় থেকে নার্সিং শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে নেত্রকোণায় বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু জাহাঙ্গীর কবির নানক ও তার স্ত্রী-কন্যার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ছাত্র সমাজই ঠিক করবে : প্রধান উপদেষ্টা হলোখানায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যার অভিযোগে পাষণ্ড পিতাসহ গ্রেফতার-৩

৬ হাজার কোটি টাকার বেশিরভাগই নয়ছয়

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের কাঁচা সড়কটির মাটি সরানোর কাজ শেষ হয় এক বছর আগে। এ কাজের জন্য বরাদ্দের কিছু টাকা এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে। কিন্তু পাকা হয়নি এখনও। ফলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ৬০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট গ্রামীণ এই রাস্তাটির কাজ শেষ হবে কবে, আদৌ হবে কি-না তা অনিশ্চিত। রংপুর সদর উপজেলা থেকে হারাটি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয় ২০১৬ সালে। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি তৈরি করা হলেও দুই বছর না যেতেই এর ৯০ শতাংশ রাস্তা ভেঙে গেছে। এখন চলাচলের অনুপযোগী। বগুড়া জেলার ৩৫টি ব্রিজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সংসদ সদস্যদের জন্য নেওয়া ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লি উন্নয়ন অবকাঠামো প্রকল্প’-এ বরাদ্দের টাকায় নির্মিত সারাদেশে এ রকম অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের বেহাল দশা। নিম্নমানের কাজ, পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ, কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন, মাঝপথে এসে কাজ বন্ধ করাসহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের এই বড় প্রকল্পে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পছন্দের ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রকৌশলীরা যোগসাজশে সরকারি অর্থ লুটপাট করেন। তদারকি না থাকায় এসব কাজে কোনো স্বচ্ছতা নেই। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও এর সুফল স্থানীয় জনগণ পাচ্ছে না।

পরিকল্পনা কমিশন, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগসহ (আইএমইডি) সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমকালের অনুসন্ধানেও এ প্রকল্পে অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ সমকালকে বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। কারণ, সব কাজ ঠিক করে দেন এমপিরা। ঠিকাদার নিয়োগ করেন তারা। এসব কাজের তদারকি তেমন একটা হয় না। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। জনপ্রতিনিধিদের জন্য এ ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেওয়া ঠিক না। কিন্তু সরকার এ পরামর্শ আমলে নেয় না। তিনি আরও বলেন, পাশের দেশ ভারত ও শ্রীলংকায়ও এ ধরনের প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। তবে বাংলাদেশের অবস্থা প্রতিবেশী দেশের চেয়ে অনেক বেশি।

এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেনি। তারা বলেছে, সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। কাজেই সব জায়গায় কাজের মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তদারকি করাও সম্ভব নয়।

ময়মনসিংহ-১১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাংসদ কাজিম উদ্দিন ধনু সমকালকে বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় যেসব ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীদের বলে দেওয়া হয়েছে, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার ডাকতে। বগুড়া-২ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ শরিফুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন কাজের বরাদ্দের টাকা ঠিকমতোই ব্যয় হচ্ছে, কোনো অনিয়ম হয়নি।

জানা গেছে, ভারতে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের দায়ে অনেক এমপির বিরুদ্ধে শাস্তি হয়। কারও কারও সদস্যপদ বাতিল হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, যে কোনো খাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করতে পারে দুদক। এমপিদের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা খুঁজে দেখবেন বলে জানান তিনি।

প্রত্যেক এমপির নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাঁচ বছর ধরে এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও হাটবাজার নির্মাণ ও মেরামতের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পে সারাদেশের ৩০০ এমপির জন্য মোট ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলেছে, প্রকল্পটি যাতে চালু থাকে সেজন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন এমপিরা। ২০১০ সালে এ প্রকল্প চালু হয়। তখন প্রত্যেক এমপির জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ক্ষেত্রে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) অফিস এ প্রকল্প মূল্যায়ন করে। ২০১৫ সালে তৈরি করা সিএজির প্রতিবেদনে প্রথম প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।

সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের প্রকল্পে সরকারি অর্থ লুটপাটের এমন চিত্র দেখে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এটি বন্ধের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পরে এমপিরা এর বিরোধিতা করেন এবং এর কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। ফলে দ্বিতীয় ধাপে ২০১৬ সালে এ প্রকল্প আবার নেওয়া হয়।

মাঠপর্যায়ে সমকাল প্রতিনিধিদের সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় বছর যেতে না যেতেই সড়কের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। ঝুঁকিতে আছে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট। এ প্রকল্পের আওতায় অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট মাঝপথে এসে থেমে গেছে। আবার কাজ শেষ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন ঠিকাদার।

যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দিন সমকালকে বলেন, এ প্রকল্পে কোনো অনিয়মের অভিযোগ তার জানা নেই। তবে মাঠপর্যায়ে কিছু অনিয়ম হতে পারে। তৃতীয়বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান তিনি।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের এটি অন্যতম বড় প্রকল্প। সারাদেশে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সব জায়গায় কাজের মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিছু অনিয়ম হয়, অস্বীকার করছি না। তবে অভিযোগ পেলে দায়ী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত কাজের তদারকি করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ২০টি টিম কাজ করে। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও যৌথভাবে তদারকি করছেন। এর বাইরে এমপিরাও তদারকি করছেন।

এলজিআরডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এমপি তার এলাকার জন্য পছন্দ অনুযায়ী কাজ ঠিক করেন। একজন এমপি তার পূর্ণ মেয়াদে গড়ে ৩০ থেকে ৫০টি ছোট রাস্তা, সড়ক, কালভার্ট ও গ্রামীণ হাট নির্মাণ করতে পারেন। কাজ অনুযায়ী বরাদ্দের টাকা ছাড় দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ১২ হাজার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও গ্রামীণ হাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ অবকাঠামো তৈরি হয়। এসব কাজের পেছনে গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৯৫ শতাংশ। মূল বরাদ্দ ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা।

ময়মনসিংহ থেকে সমকালের নিজস্ব প্রতিবেদক মীর গোলাম মোস্তফা জানান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইজবাগ ইউনিয়ন সংযোগের ৬০৫ মিটার একটি কাঁচা সড়ক নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেসার্স সাদী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তা নির্মাণের কাজ পায়। এলাকায় গিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা গেছে। সড়কটি প্রায় বছরখানেক আগে বক্স কাটা (গর্ত করে মাটি সরানো) হয়। পরে আর কোনো কাজ করা হয়নি। ফলে মহাদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের মানবাধিকারকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখছিল। কাজ না হওয়ায় সড়কটি মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়েছে।

রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক মেরিনা লাভলী জানান, এ প্রকল্পের আওতায় ছয়টি সংসদীয় আসনে আটটি উপজেলায় নিম্নমানের কাজ বাস্তবায়নের অভিযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ সড়কের বেহাল দশা। সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোখলেছুর রহমান বলেন, সাংসদের নামে কাজের জন্য যে বরাদ্দ আসে, তার শতকরা ১০ ভাগও কাজ হয় না। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ করেন তিনি। রংপুর উপজেলা সদর থেকে বুড়িরহাট ভায়া হারাটি সড়কের দেড় কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয় ২০১৬ সালে। এ কাজে ব্যয় হয় ৪২ লাখ টাকা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হারাটি থেকে বাহাদুরসিংহ মসজিদ পর্যন্ত ওই সড়কের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। হারাটি পশ্চিমপাড়া বটতলা এলাকার কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, রাস্তাটি নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। এ ছাড়া সদরের শ্যামপুর পালিচড়া বাজার থেকে রানীপুকুর ভেলিরোড, ধনতোলা থেকে ডালিয়া পাকা রোড, বদরগঞ্জ থেকে মণ্ডলের হাট, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কালামের তল এলাকায় নির্মিত সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে। যদিও রংপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল হক দাবি করেন, তারা গুণমান ঠিক রেখেই সড়ক নির্মাণ করেছেন।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক এসএম কাওসার জানান, এ জেলার ৩৫টি ব্রিজ চলাচলের ঝুঁকিতে আছে। ব্রিজ নির্মাণে সাংসদরা তেমন গুরুত্ব দেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, একটি ব্রিজ নির্মাণে যে টাকা খরচ হয়, সমপরিমাণ টাকা দিয়ে কমপক্ষে সাত কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণ করা যায়। নতুন রাস্তা তৈরিতে টাকা নয়ছয়ের সুযোগ থাকায় এ কাজে আগ্রহী সাংসদরা। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ থেকে সদরের জামুরহাট-নামুজা-ভাইয়ের পুকুর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরিতে ব্যয় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, তিন বছর আগে নির্মাণ করার পর বছর না যেতেই সড়কটির কার্পেটিং উঠে গেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার মেসার্স রিজু কনস্ট্রাকশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এর উত্তর দিতে পারেনি।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews