তিন কোটি মানুষের শহর ঢাকায় থিয়েটারে দর্শক মেলে না ঠিকমতো। দু’একটা দল বিশেষ দিনগুলোতে হলভর্তি দর্শক পেলেও অনেক দলের কপালে তাও জোটে না। অথচ একটি শহরকে সংস্কৃতবান করে তোলার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার থিয়েটার। আর তাই নগরবাসীর প্রতি প্রখ্যাত নাট্যকার মাসুম রেজার সবিনয় প্রশ্ন, থিয়েটারের জন্য কি আপনার কিছুই করার নেই?
থিয়েটারে নিজেদের শ্রমের গল্প নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন মাসুম রেজা। গল্পটি পাঠকদের উদ্দেশে হুবুহ তুলে দেয়া হলো-
‘‘সেদিন সকাল থেকে জলবাসর-এর মহড়া করছি.. শিল্পকলায়.. শুরু হয়েছে ১১টায় চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত.. দুপুরের খাওয়ার টাকা আমরাই পকেট থেকে দেবো.. এফডিসি থেকে খাবার আসবে.. এই টাকাটা দলের ফান্ড থেকে খরচ করা যেতো কিন্তু সবাই মিলে ভাবলাম টাকাটা নিজেদের পকেট থেকে খরচ করলে দলের কিছু টাকা সেভ হবে.. মধ্যাহ্ন বিরতিতে অনেকেই রিহার্সালরুমের ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে, আর একদল ছেলেমেয়ে গলা ফাটিয়ে গান করছে.. নানা ধরণের গান.. জনপ্রিয় সব গান.. এমন সময় কামাল এসে বললো; আজকের এই রিহার্সালের মোট খরচ কত জানেন মাসুম ভাই? আমি বললাম; এই রুমের দুই শিফ্টের ভাড়া আর লাঞ্চে যেটুকু খরচ হলো তাই.. কামাল বললো; না ভাই আমি হিসাব করে দেখলাম আজকের রিহার্সালের খরচ দু্ইলাখ টাকার উপরে.. আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম.. কামাল বলে চললো; আজকে বন্যা, চুমকি, সুষমা, তিথি, নীরব, রিপনসহ আরো বেশ কয়েকজনের স্যুটিং সিডিউল ছিলো.. তারা ক্যান্সেল করে এসেছে.. আপনি কমপক্ষে দুই পর্ব নাটক লিখতে পারতেন.. সাথে আমি, শেলী আপা, ফিরোজ, লেতুনজেরা যারা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে কাজ করি.. আর ইভান, অসীম, মাহফুজ, সুস্মিতা যারা মাস্টারি করে.. নানা ধরণের পেশার অন্য সবার একদিনের আয় যোগ করলে তা দুইলাখ ছাড়িয়ে যাবে.. আমি মৃদু হেসে বললাম; এটাই থিয়েটার.. থিয়েটারে কেউ নিতে আসে না.. দিতে আসে.. কেবল অর্থনৈতিক বিচারে নয়.. থিয়েটারে আমরা নিজেদের শ্রম, মেধা, ঘাম উজাড় করে দিই.. কেবল আপনাকে আর আপনার শহরকে সংস্কৃতবান করে তোলার জন্যে.. থিয়েটারের জন্যে কী আপনার কিছুই করার নেই!!’’