মিলন : ল²ীপুর জেলার রায়পুর থানা পুলিশের সাথে পূর্ব বিরোধের জেরে আব্দুর রাজ্জাক আরিফ নামে একজন ব্যবসায়ী ও মানবাধিকারকর্মীকে মিথ্যা মাদক মামলায় জড়িয়ে জেল হাজতে প্রেরণ ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানেই শেষ নয়- দীর্ঘ ৫৫দিন কারাগারে কাটিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসেও আতংকে দিন কাটছে আরিফের। কারন পুলিশ আবারো তাকে অন্যকোন ভাবে অন্যকোন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করবে আশংকায়। ঘটনাসূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৯জুন আরিফ রায়পুর বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পার্শ্বে তার মালিকানাধীন বিসমিল্লা অয়েল এজেন্সীতে বসে ব্যবসা করে আসছিল। বিকালে তার দোকান ঘরের মালিক দোকান ঘর সংলগ্ন বাসার বাসিন্দা সাবেক কমিশনার ফেরদৌসী বেগম মায়ার কাছে ভাড়া সংক্রান্ত পাওনা নিয়ে কথা বলতে যান। তিনি উক্ত বাসার সামনে গেলে রায়পুর থানার এস আই মোজাম্মেলসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে উক্ত স্থানে যাওয়ার কারণ জানতে চায়। পরবর্তীতে তারা উক্ত বাড়িতে প্রবেশ করে টিপু সুলতান টিপুকে আটক করে। এ সময় পুলিশ টিপুর বসত ঘরে মাদকের (ইয়াবা) তল্লাশী চালায়। পরবর্তীতে পুলিশ আরিফকে থানায় ওসির সাথে দেখা করার কথা বলে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় আরিফ তার দোকান বন্ধ করে তালা দিতে চাইলেও পুলিশ তাকে তা করতে দেয়নি। পরবর্তীতে তাকে রায়পুর থানার এস আই মোজাম্মেল হোসেন বাদী হয়ে টিপু ও আরিফকে আসামী করে মাদকদ্রব্য আইনে দায়ের করা রায়পুর থানার মামলা নং-২১ জি আর ১১৫ তারিখ ১৯-০৬-১৮ইং বাদী একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আটক রাখে। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ দিকে গভীর রাত পর্যন্ত তার দোকান ঘরটি খোলা পড়ে থাকার সুবাধে তার দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৪২হাজার টাকাসহ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়ে যায়। আটক ও পরবর্তীতে তার পরিবারের সাথে আরিফকে কোনভাবেই কারো সাথে কথা বলতে বা যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলে দাবী করে আরিফ জানায়, রাতে তার মা খবর পেয়ে থানায় এলেও তার মাকে তার সাথে কথা বলতে তো দেয়ইনি বরং তার মায়ের সাথেও কয়েকজন পুলিশ খারাপ আচরণ করে। উক্ত মামলায় আরিফ থেকে ২২টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। পুলিশ তার স্বজনদের কাছে তার পরিচয়পত্র ফেরৎ দেয়নি। তার মোবাইলটি জব্দ তালিকায়ও দেখায়নি। আরিফ জানায় তার মোবাইলের মেমোরিতে তার গুরুত্বপূর্ণ অনেক ডকুমেন্ট রয়েছে।
মামলায় ঘটনার সময় উপস্থিত একমাত্র সিভিল স্বাক্ষী রায়পুর উপজেরার সগরদি গ্রামের মৃত হাজী আহ্ছান উল্্যার পুত্র ও ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনার দিন তিনি মামলার তদন্ত সংক্রান্ত কাজে রায়পুর থানায় গেলে থানার এস আই মইনুল তাকে সাথে করে রায়পুর বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে কমিশনার ফেরদৌসী বেগমের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি আরিফকে বসা দেখতে পায়। পুলিশ তল্লাশী করে কোন মাদক না পেলেও টিপু সুলতান টিপুকে ও ব্যবসায়ী আরিফকে থানায় নিয়ে যায়। আরিফকে এ সময় পুলিশ জানায় আপনি ওসি স্যারের সাথে দেখা করে চলে আসবেন। কোন সমস্যা নাই। আরিফ এ সময় দোকান বন্ধ করতে চাইলেও তারা তাকে সে সুযোগ দেয়নি। পরবর্তীতে থানায় এনে তার দেহ তল্লাশী করলেও আইডি কার্ড ও মোবাইল ছাড়া অন্য কিছু পায়নি। পুলিশ আমার থেকে কাগজে স্বাক্ষর নিলেও আমি তাদের কাছ থেকে কোন মাদক উদ্ধার করেছে বলে দেখিনি এবং পুলিশ আমাকে বলেও নি। আমি থানায় তাকে লকাপে ঢুকানো পর্যন্ত ছিলাম। আমি দেখেছি আরিফ থানার সকল পুলিশ কর্মকর্তার সাথে পূর্ব থেকেই পরিচিত।
এদিকে আরিফ জানায়, আমি মানবাধিকার সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন সময়ই থানায় যাই। আমি তোদের বিভিন্ন কাজের প্রতিবাদ করি। বিশেষ করে আমি গত রমজানের আগের রমজানে অন্যায়ভাবে থানার এ এস আই সবুজ আমার মোটর সাইকেল আটক করে রাখায় ও আমার সাথে আটক করা ৭টি মোটর সাইকেল টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করার পর ওসি তদন্ত সোলাইমানসহ থানায় বসে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করি। এর পর থেকে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। আরিফ আরো দাবী করে বলেন, আমি জামিনে এসেও চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছি। আমাকে এখনো আরো মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের হুমকিতে আমি এখন আতংকে জীবন যাপন করছি। আমি কখনো মাদক সেবন বা বিক্রির করিনি। কোনভাবেই আমি এ সবের সাথে জড়িত হইনি। আমি ১১ বছর ধরে একই স্থানে মোটর পার্টস এর ব্যবসা করে আসছি। আজ পুলিশ আমাদে মাদক মামলায় জড়িয়ে হয়রানির পাশাপাশি আমার ব্যবসায়ীক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
আব্দুর রাজ্জাক আরিফ বলেন, বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকমুক্ত দেশ গড়ার জন্য যে অভিযান পরিচালনা করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তা অত্যান্ত যুগোপযুগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি কেন দেশের সবাই চায় দেশকে মাদকমুক্ত রাখতে। কারণ মাদক দেশের যুবক-যুবতী, বৃদ্ধা আবাল বনিতাসহ পচন ধরে গেছে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই সমাজ ও দেশ থেকে মাদককে নিমূল করতে হবে। আমি দীর্ঘদিন যাবত রায়পুর থানা এলাকায় কাজ করেছি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনেক সংবাদ কভার করেছি। পুলিশের সাথে আমার সর্ম্পক কখনোই খারাপ ছিলো না কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো আমি জানি না। রায়পুর থানা পুলিশ আমাকে ও আমার মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও আমাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করেছে। এবং ওসি সাহেবকে বাবা বলতে বলেছেন। আর কোনদিন আমি যাতে কোন মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ না করি তারও হুমকি দিচ্ছে। আমি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজেএফআই, এনএসআই, সিআইডি ও এসবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাবো যেন, আমার মতো আর কোন মানবাধিকার কর্মীর উপর কোন রকম অন্যায়ভাবে মাদক মামলায় ফাঁসানো না হয়। পাশাপাশি আমাকে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে ঐ মামলার ব্যাপারেও সঠিক তদন্ত করে যদি সতত্যা পাওয়া যায় তবে আমি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হবো। আর যদি না পায় আমার বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে তার বিচার যেন আমি দেখে যেতে পারি। এটাই আমার প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী।
ওসি তদন্ত সোলেমান ও এএসআই বিপ্লব আমার উপর চরম নির্যাতন করেছেন। এএসআই ময়নাল আমার মায়ের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেছেন।