মোঃ নুর নবী জনি:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার নৌকা প্রতীকটি মাহফুজুর রহমান কালামের হাতেই ওঠতে যাচ্ছে-এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে একাধিক শীর্ষ নেতার সূত্রে। সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের মধ্যে যে দৈন্যদশা চলছে সেই জটিলতা নিরসনে এ আসনটি আওয়ামীলীগকে উদ্ধার করা জরুরী হয়ে ওঠেছে। যে কারনে জেলার শীর্ষ একাধিক নেতা মত দিয়েছেন আগামীতে সোনারগাঁও আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন জোড়ালোভাবেই চাওয়া হবে। এরশাদের জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে থাকলে দেশের অন্য কোন জেলায় ছাড় দেয়া হতে পারে-এমনটা চান কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও। উপজেলা আওয়ামীলীগ এর ভারপাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাহফুজুর রহমান কালামের মাধ্যমেই এ আসনটি উদ্ধার করতে চায় আওয়ামীলীগ। এ আসনে এককভাবে জাতীয়পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে জাতীয় পার্টির কি করুণ দশা হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসন থেকে আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেদের জাহির করছেন। এদের মধ্যে সদ্য আওয়ামীলীগে এসে যোগদান করার মত নেতাও অনেক রয়েছেন,ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার সহ অনেকে। যাদেরকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন হাইব্রীড ও কাউয়া। অনেকেই দেশের বাহিরে থেকেও আওয়ামীলীগ নেতা সেজে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে জাহির করছেন। এক দেড়যুগ ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যাদের দেখা নেই তারাও হুট করে এসে সোনারগাঁও থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে জাহির করছেন। সোনারগাঁও থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়াটা যেনো হরিলুটের মাল! এমনও অনেক ব্যক্তি নিজেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে জাহির করছেন তারা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার পদে নির্বাচন করেও জামানত ফিরে পাবেন কিনা তা নিয়ে বেশ শঙ্কা রয়েছে।নেতাকর্মীরা বলছেন, সোনারগাঁও আসন থেকে নৌকা প্রতীকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে একমাত্র মাহফুজুর রহমান কালাম। দল যদি কালামের বিকল্প চিন্তা করে তাহলে নাম আসতে পারে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। এদের ছাড়া বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ভোটের রাজনীতিতে ও সাংগঠনিক রাজনীতিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা করে যাচাই করাটাই শ্রেয়। সোনারগাঁয়ে এখন শুধুমাত্র হাইব্রীড নেতা নয় হাইব্রীড মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যে হারে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে মনে হচ্ছে নির্বাচন নাগাদ অর্ধশতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশি বাড়তে পারে উড়ে এসে জুরে বসার মতো। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে প্রভাবশালী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সোনারগাঁও থেকে কায়সার হাসনাতকেই যোগ্য প্রার্থী মনে করেন। ইতিমধ্যে সোনারগাঁয়ে এসে বেশকটি জনসভায় এমনটাই বলে গেছেন মেয়র আইভী। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ ছাড়াও তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। একইসঙ্গে আইভী জাতীয়পার্টিকে এ আসনের মানুষ দেখতে চায়না বলেও মত প্রকাশ করেছেন। ইতিপূর্বে সোনারগাঁওয়ে মেয়র আইভী বেশকয়েকটি জনসভায় এসে জোড়ালোভাবেই বলে গেছেন, সোনারগাঁও সহ জেলার ৫টি আসনেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জোড়ালো দাবি করি। একইভাবে এর কদিন পর মোগরাপাড়ায় কালামের একটি সমাবেশে জেলার ৫টি আসনেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দাবি করে ঘোষণা দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সেক্রেটারি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। তবে আবদুল হাই ও শহীদ বাদল সোনারগাঁও কোন নেতার পাশে রয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়। তাদের দাবি একটাই ৫টি আসনে নৌকা চাই।২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর সোনারগাঁওয়ে একটি অনুষ্ঠানে সোনারগাঁয়ের রাজনীতি ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আইভীর ওই বক্তব্যে সোনারগাঁওয়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। মেয়র আইভী কঠোর ভাষায় বলেছিলেন, সোনারগাঁওয়ে নেতাকর্মীরা আর জাতীয়পার্টিকে এখানে দেখতে চায়না। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসীরা এখন সোনারগাঁয়ে। বালু সন্ত্রাসীদের থাবায় সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য বিলিন হয়ে গেছে।আরেকটি অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, সোনারগাঁয়ে চারদিকে শুধু নেতা আর নেতা। উড়ে এসে জুরে বসে নিজেকে এমপি পার্থী হিসেবে যাহির করতে চায়,আওয়ামীলীগের দুর্দিনে নেতা পাওয়া যায় না।তাই বলেতো টাকা দিয়ে নতুন কোন লোককে প্রার্থী করা আওয়ামীলীগ এর পক্ষে সম্ভাব না।অন্যদিকে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু তিনি ও এমপি হতে মরিয়া, সোনারগাঁওয়ে বিরুকে দীর্ঘদিন যাবত সহযোগীতা করে আসছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। তবে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুল ইসলাম ভুইয়াকে কখনও দেখা যায় বিরুর সঙ্গে আবার কখনও দেখা যায় কায়সারের সঙ্গে। তবে সোনারগাঁওয়ে যে কজন মনোনয়ন প্রত্যাশি রয়েছেন তাদের মধ্যে যোগ্যতা ও ভোটের দিক দিয়ে এগিয়ে কালাম। একজন অহিংসু ও ভদ্র রাজনীতিবিদ হিসেবে সোনারগাঁয়ের মানুষেরও প্রথম পছন্দ মাহফুজুর রহমান কালাম। ৪ দলীয় জোট সরকার আমলে কঠোর আন্দোলন করে আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে এসেছিলেন কালাম। পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত জখম হয়েছিলেন তিনি ও তার ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মাছুম।তাদের আন্দলনেই সোনারগাঁয়ের বি এন পির তিন বারের এমপি রেজাউল করিমকে পরাস্ত করে কায়সার হাসনাতকে এমপি করা হয় বিপুল ভোটের মাধ্যোমে। কায়সার হাসনাত এমপি হওয়ার পর তার আশপাশে থাকা দুচারজন লোকের কিছু কর্মকান্ড বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। পদ-পদবী না থাকলেও সোনারঁগাঁয়ে তারাই হয়ে ওঠেছিল প্রভাবশালী ও প্রতাপশালী নেতা। এমপি হওয়ার পর কায়সার হাসনাতের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুরুত্ব সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা যোগাযোগ রাখতে থাকে কালামের সঙ্গে। সে সুযোগে সোনারগাঁয়ে কালাম একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। তবে সোনারগাঁওয়ের মানুষ ও নেতাকর্মীরাও মনে করছেন যারাই মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে দাবি করছেন সেক্ষেত্রে মনোনয়ন বিবেচনায় সবার আগেই নাম আসবে মাহফুজুর রহমান কালামের। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশি থাকলেও এ কারনেই আশার আলো দেখছেন কালাম সমর্থকরা।