
বিশ্ব আজ বুঝে গেছে—পর্যটন কেবল বিনোদনের বিষয় নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক বিশাল ক্ষেত্র। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশই এখন এই শিল্পের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এটি সরাসরি জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলে এবং অর্থনীতিকে চাঙা করে।
মৌরিশাস, মালদ্বীপ, ফিজি কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো পর্যটনের সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১০ শতাংশেরও বেশি, আর এই খাতেই কর্মসংস্থান পাচ্ছেন প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। বিমান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, হস্তশিল্প কিংবা বিনোদন—সবখানেই পর্যটনের প্রভাব বিস্তৃত।
বাংলাদেশও এই সম্ভাবনার বাইরে নয়। প্রকৃতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসে সমৃদ্ধ আমাদের দেশ পর্যটনের জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারত। কিন্তু পরিকল্পনার অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রচারণার ঘাটতির কারণে আমরা এখনো পিছিয়ে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিদেশি পর্যটকদের খরচ কমেছে প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা, যা এ খাতের সংকটকে স্পষ্ট করে।
অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ পর্যটনে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেলেও আন্তর্জাতিক পর্যটনে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ এই খাতটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার হতে পারত। তরুণ প্রজন্মকে পর্যটন পেশায় উৎসাহিত করা এবং পর্যটনকে শিক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
পর্যটন কেবল দৃশ্যমান স্থান ঘুরে দেখা নয়—এটি কৃষি, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা, পরিবহনসহ অজস্র খাতের সঙ্গে সংযুক্ত একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম। তাই সরকার, বেসরকারি খাত এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে এই খাতকে গড়ে তুলতে হবে।
যদি পর্যটনকে জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের অংশ করা যায়, তবে এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক রূপান্তরেরও অনুঘটক হবে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের ভেতর যে সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, তা কাজে লাগাতে পারলে একদিন আমরাও হতে পারি দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটন শক্তি।