বাংলাদেশে প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত কারণে প্রাণ হারান, আর চার লক্ষাধিক মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এই পরিসংখ্যান কেবল ভীতিকরই নয়, বরং একটি ভয়াবহ জাতীয় স্বাস্থ্য সংকটের প্রতিচ্ছবি। প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকের কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ, তামাক শুধু ব্যবহারকারীর জীবনকেই বিপন্ন করছে না; নির্দোষ আশপাশের মানুষকেও প্রাণঘাতী ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক হৃদরোগ, ক্যান্সার ও শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। অথচ এ ধরনের মৃত্যু পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হলেও তা যুগোপযোগী নয়। তামাক কোম্পানিগুলো এই আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। জনস্বার্থ রক্ষায় আইন দ্রুত সংশোধন ও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা এখন সময়ের দাবি।
আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের সব ধরণ নিষিদ্ধ করা, জনসমাগমস্থলে ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা, তামাকজাত পণ্যে উচ্চ হারে কর আরোপ এবং বিক্রয়ের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা অপরিহার্য। একই সঙ্গে তামাক কোম্পানির প্রভাব মোকাবিলা করে জনস্বাস্থ্যের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। তা না হলে স্বাস্থ্য খাতের ওপর বোঝা আরও বাড়বে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং অকাল মৃত্যুর হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিদিন হাজারো মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন—যাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এটি কেবল ব্যক্তিগত অভ্যাসের বিষয় নয়; বরং অন্যের স্বাস্থ্যের প্রতি ইচ্ছাকৃত ক্ষতি, যা আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। কিন্তু আইন সংস্কার ও প্রয়োগে গতি না আনলে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। প্রতিটি দিনের বিলম্ব মানে আরও মৃত্যু, আরও পরিবার শোকাহত হওয়া।
তামাকবিরোধী এই লড়াই কেবল স্বাস্থ্য খাতের দায়িত্ব নয়; এটি একটি জাতীয় অঙ্গীকার। সরকার, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও প্রতিটি সচেতন নাগরিককে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই তামাকের শৃঙ্খল ছিন্ন করে একটি সুস্থ ও প্রাণবন্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এখনই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।