
লাইফস্টাইল ডেস্ক: প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়া বা লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট জীবনে এক বা দুইবার হওয়া স্বাভাবিক। এটি মানুষের আবেগপ্রবণ স্বভাবের অংশ। তবে যখন এই অনুভূতি নিয়মিত এবং বারবার ঘটে, তা কেবল আকর্ষণ নয় -এটি হতে পারে একটি মানসিক প্রবণতার সংকেত। যা ইমোফিলিয়া নামে পরিচিত। দ্রুত এবং ঘন ঘন প্রেমে পড়ার এই প্রবণতা সচেতন না হলে সময়, অর্থ এবং মানসিক শান্তি হ্রাস করতে পারে।
ইমোফিলিয়া কী
ইমোফিলিয়া হলো সেই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যেখানে মানুষ প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যান। এই প্রবণতাকে আবেগগত অবাধ্যতা নামেও ডাকা হয়।
ইমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি অল্প সময়ের মধ্যে রোমান্টিক আবেগ তৈরি করেন। এটি ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি নয়, বরং প্রেমের প্রতি অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা এবং তীব্র আবেগের প্রকাশ। যেসব মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি থাকে, তারা প্রায়ই নেতিবাচক ব্যক্তিত্বের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হন। এতে তারা সম্পর্কের নেতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করেন এবং পরে ভুল সম্পর্কের জন্য অনুতপ্ত হন। জার্নাল অব পার্সোনালিটি অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল ডিফারেন্সেস-এ প্রকাশিত ২০২১ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ইমোফিলিয়া মানুষকে ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম, সাইকোপ্যাথি এবং নার্সিসিজমের মতো ব্যক্তিত্বের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে পারে। ইমোফিলিয়ার কারণে মানুষ তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ- সময় নষ্ট করে ফেলেন। এছাড়া দ্রুত প্রেমে পড়ার এই অভ্যাসের কারণে তারা প্রায়ই সঙ্গীকে খুশি করার জন্য অর্থ ব্যয় করেন। যদি সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী না হয়, তবে অর্থের ক্ষতিও সহ্য করতে হয়।
ইমোফিলিয়ার একটি স্পষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে যদি আপনি এই প্রবণতার শিকার হন, কিছু সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব-
নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা
যদি আপনার ইমোফিলিয়ার লক্ষণ থাকে, তাহলে প্রথম ধাপে আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। সঙ্গীর মধ্যে আপনি কী চান, তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন:ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, বিশ্বাস, সম্মান এবং স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিক। একইভাবে একটি তালিকা তৈরি করুন যা আপনি মোটেও মেনে নিতে চান না বা যা আপনার সঙ্গীর মধ্যে থাকা উচিত নয়। এটি আপনাকে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সচেতন এবং বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
প্রিয়জনের কথা উপেক্ষা না করা
ইমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই শুধুই একজন ব্যক্তির প্রতি মনোযোগ দেন এবং অন্যদের সতর্কবার্তা শুনতে চান না। এমন সময়ে বন্ধু বা পরিবারের কাছের কেউ যদি আপনাকে সতর্ক করে, তাদের কথা অবহেলা করবেন না। এটি আপনাকে পরে অনুশোচনা থেকে রক্ষা করতে পারে।
অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া
যদি পূর্বে এই অভ্যাসের কারণে ভুল সম্পর্কের মধ্যে পড়ে থাকেন, তাহলে আগের সম্পর্কের ব্যর্থতার কারণগুলো মূল্যায়ন করুন। এটা বুঝতে সাহায্য করবে কেন অতীতে সম্পর্ক কাজ করেনি এবং ভবিষ্যতে কীভাবে আরও সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা
সম্পর্কের ধরণ বোঝার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পরই সিদ্ধান্ত নিন। প্রিয়জনের প্রতি অনুভূতি থাকলেও বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সম্পর্কের প্রতি যুক্তিসঙ্গত মনোভাব রাখুন। এই পদ্ধতিগুলো আপনাকে ইমোফিলিয়ার নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে এবং সুন্দর রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।