আলমাস হোসেনঃ ঢাকা জেলার সেরা তরুণ করদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আশুলিয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ রোমান ভূঁইয়া। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লো-তে আয়োজিত করদাতা সম্মননা প্রদান অনুষ্ঠানে তার হাতে স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ নিয়ে চতুর্থ বারের মতো সেরা তরুণ করদাতা হিসেবে তিনি নির্বাচিত হলেন। সেরা করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এমপি।
ঢাকা জেলার সেরা করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ রোমান ভূঁইয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। রোমান ভূঁইয়া বন্ধন ডিস্টিবিউশন অ্যান্ড সাপ্লাই, নায়ফা ট্রেড বিডি, প্রভাত হাউজিংসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
তিনি শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়া এলাকার আলহাজ্ব ছফিল উদ্দিন ভূঁইয়ার কৃতি সন্তান।
পুরস্কারে ভূষিত হয়ে ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ রোমান ভূঁইয়া দৈনিক স্বাধীন সংবাদকে বলেন, ২০০৭ সালে লেখা পড়া শেষ করে ব্যবসার চিন্তা মাথায় ঢোকে। কিন্তু হাতে পুঁজি না থাকায় মায়ের কাছে ব্যবসার কথা বলতেই প্রথমে বিরোধিতা করেন। পরে তিন লাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মা আমাকে দোয়া ও আশীর্বাদ করে দেন। পরে মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের প্রথম এক্সক্লুসিভ আউটলেট দিয়ে ব্যবসায় যাত্রা শুরু করেছিলাম। অনিশ্চিত ছিল ব্যবসার ভবিষ্যৎ। নিজেই সেবা দিতাম গ্রাহকদের, দিন-রাত পরিশ্রমই ছিল আমার ব্যবসায়ের সফলতার চাবিকাঠি। মোবাইল নেটওয়ার্ক যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ততই বাড়তে থাকে আমার ব্যবসার পরিধি। ব্যবসার সফলতা দেখে এক বছর পর আরো ১০ লাখ টাকা পুঁজি দেন আমার বাবা আলহাজ্ব ছফিল উদ্দিন ভূইয়া। এই পুঁজি দিয়ে ২০০৮ সালে জামগড়া এলাকাতেই গ্রমীনফোনের আরও একটি নতুন আউটলেট চালু করি। এরপর দিন যতই গড়িয়েছে ব্যবসার পরিধি ততই বেড়েছে। প্রথম বছরেই গ্রামীনফোনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী আউটলেট হিসেবে মনোনীত হই এবং এই অঞ্চলে গ্রামীনফোনের ডিষ্ট্রিবিউটরশীপ পাই।
ব্যবসায় মুনাফা বাড়তে থাকলে অন্যান্য খাতেও বিনিয়োগ শুরু করি। বর্তমানে আমার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে-বন্ধন ডিষ্ট্রিবিউশন এন্ড সাপ্লাইয়ার্স (ডিষ্টিবিউটর অব গ্রামীনফোন), প্রভাত হাউজিং লিমিটেড, গ্লোরী ডিষ্ট্রিবিউশন কর্পোরেশন (ডিষ্ট্রিবিউটর অব বিকাশ), নায়ফা ট্রেড বিডি লিঃ, শার্প স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এবং নান ব্রিকসে কাজ করছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী।
ব্যবসাকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসার পথে নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রোমান ভূইয়া আরও বলেন, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আমার বাপ-দাদার অনেক সম্পদ ছিল। তবুও এতটা সহজ ছিল না আমার নিজের পথচলা। হাল ছাড়িনি। প্রথম দিকে বেতনভুক্ত কর্মী ছাড়াই ব্যবসা সামাল দিয়েছি।
সকাল ৮ থেকে রাত ১২টা অবধি কাজ করেছি। দুপুরের দিকে আউটলেট বন্ধ করে কখনও ঘুমাইনি। এই সময়ের মধ্যে গ্রামীনফোনের কিংবা বাংলালিংকের প্রধান কার্যালয়ে ছুটে গিয়েছি। ঢাকার যানজটে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়েছি। তারপরও পরের দিন আবার আউটলেট খুলে সেবা দিয়েছি।
রোমান ভূইয়া বলেন, ব্যবসা বড় হতে থাকলে নিজেকে সামাজিক বিভিন্ন কাজ-কর্মে নিয়োজিত করতেও কৃপনতা দেখাইনি। নিজের এলাকাতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছি। কখনো সরকারের কর ফাকি দেয়ার চিন্তা করিনি। ব্যবসা শুরুর পরের বছর থেকে আমি আয়কর দাতা হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন করি। ব্যবসা যত এগিয়েছে কর দেয়া ততই বাড়িয়েছি। ২০১৬ সালে ঢাকা জেলায় প্রথম সেরা করদাতা হিসেবে সম্মননা পাই। এরপর ২০১৭, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালেও সেরা করদাতা নির্বাচিত হলাম। আমি মনে করি রাষ্ট্রের সঙ্গে কখনই বেঈমানী করা উচিত নয়। কখনই সম্পদের হিসেব গোপন রাখা উচিত নয় বলেও জানান আশুলিয়ার বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী।